বৃশ্চিক রাশি ২০২৬ সম্পূর্ণ রাশিফল: কষ্টিপাথরে যাচাই শেষে সোনার সাফল্য
বিশাখা (চতুর্থ চরণ), অনুরাধা (৪টি চরণ), জ্যেষ্ঠা (৪টি চরণ) নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা বৃশ্চিক রাশির অন্তর্ভুক্ত। কালপুরুষ চক্রে এটি অষ্টম রাশি। এর অধিপতি গ্রহ হলেন মঙ্গল। জল তত্ত্বের রাশি হওয়ায় বৃশ্চিক গভীরতা, গোপনীয়তা, অন্তর্দৃষ্টি এবং পুনর্জন্মের প্রতীক। বাইরে থেকে আপনাকে শান্ত বা গম্ভীর দেখালেও, আপনার ভেতরে থাকে আগ্নেয়গিরির মতো তেজ, জেদ এবং অদম্য লড়াই করার ক্ষমতা।
২০২৬ সালটি বৃশ্চিক রাশির জাতকদের জন্য একটি সিনেমার মতো ঘটনাবহুল বছর হতে চলেছে। এটি কোনো সাধারণ বছর নয়; এটি আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বছর। "রাত যত গভীর হয়, ভোর ততটাই কাছে আসে" — এই প্রবাদটি ২০২৬ সালে আপনার জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্য হতে চলেছে। বছরের শুরুটা আপনাকে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক এবং আবেগগতভাবে পরীক্ষা করবে। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাত্র গ্রহের পরিবর্তন (বৃহস্পতির উচ্চস্থ হওয়া) আপনার ভাগ্যকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে যাবে। প্রথম ভাগ হবে "অগ্নিপরীক্ষা", আর পরের ভাগ হবে "পরিশ্রমের মিষ্টি ফল"। এই পরিবর্তনের ধারা কেমন হবে এবং এর পেছনের জ্যোতিষীয় কারণগুলো কী, আসুন তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি।
গ্রহের অবস্থান ও জীবনে তার প্রভাব (Astrological Breakdown)
ফলাফলগুলো সঠিকভাবে বুঝতে হলে, ২০২৬ সালে আপনার রাশিকে প্রভাবিত করা চারটি প্রধান শক্তির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এগুলোই আপনার জীবনের পরিবর্তনের পেছনের "অদৃশ্য চালিকাশক্তি"।
১. অষ্টম বৃহস্পতি (চ্যালেঞ্জার) - ১লা জুন পর্যন্ত
আপনার দ্বিতীয় (ধন) এবং পঞ্চম (সন্তান ও বুদ্ধি) ভাবের অধিপতি বৃহস্পতি, মে মাসের শেষ পর্যন্ত অষ্টম ভাবে (কষ্ট ও পরিবর্তনের স্থান) অবস্থান করবেন। জ্যোতিষশাস্ত্রে "অষ্টম বৃহস্পতি" একটি অত্যন্ত জটিল সময়, যা গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল অর্থের প্রবাহ কমে যাওয়া বা ঋণ বৃদ্ধি নয়; এটি জীবন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে ফেলার এবং কর্মফল ভোগের সময়।
অষ্টম ভাবে থাকার সময় বৃহস্পতি আকস্মিক খরচ, গোপন শত্রু, চিকিৎসার খরচ, ইনস্যুরেন্স বা আইনি জটিলতার মতো বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসতে পারে। অতীতের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর ভার এখন স্পষ্টভাবে অনুভব করবেন। মনে হতে পারে, "আমি কি সঠিক পথে আছি?" পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্য সমস্যা, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বা ট্যাক্স/ব্যাংক সংক্রান্ত ঝামেলা এই সময়েই মাথাচাড়া দিতে পারে।
তবে একে কেবল নেতিবাচকভাবে দেখবেন না। অষ্টম বৃহস্পতি আপনাকে আত্মবিশ্লেষণ (Introspection) করতে শেখাবে। জ্যোতিষ, আয়ুর্বেদ, আধ্যাত্মিকতা বা গুপ্তবিদ্যার প্রতি আগ্রহ বাড়তে পারে। নিজের দুর্বলতা ও শক্তিগুলো চিনে নিয়ে নতুন করে জীবন গড়ার জন্য এটি একটি "শুদ্ধিকরণ" পর্ব।
২. উচ্চস্থ বৃহস্পতি (ত্রাতা) - ২রা জুন থেকে ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত
এটাই ২০২৬ সালের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। দেবগুরু বৃহস্পতি কর্কট রাশিতে (আপনার জন্মছকের নবম ভাব - ভাগ্য স্থান) প্রবেশ করে "উচ্চস্থ" (Exalted) হবেন। এটি ১২ বছরে একবার আসা একটি দুর্দান্ত যোগ। এখানে বৃহস্পতি তার পরম পবিত্র এবং দয়ালু রূপে কাজ করবেন।
ভাগ্য স্থানে উচ্চস্থ বৃহস্পতি থাকার অর্থ হলো—ধর্ম, দৈবকৃপা, চরিত্র গঠন, আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সম্মান এবং গুরুর আশীর্বাদ আপনার ওপর বর্ষিত হবে। নবম ভাব থেকে বৃহস্পতি আপনার রাশি (লগ্নে), তৃতীয় ভাব (পরাক্রম ও চেষ্টা) এবং পঞ্চম ভাব (সন্তান, শিক্ষা ও মানসিক শান্তি) দেখবেন। এর ফলে:
- পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে এক স্থিতিশীল ও আত্মবিশ্বাসী জীবনের সূচনা হবে।
- গুরুজন ও সাধু-সন্তদের আশীর্বাদ এবং সঠিক পথপ্রদর্শন পাবেন।
- পরিবারে সম্প্রীতি বাড়বে; আপনার কথার গুরুত্ব বাড়বে।
- আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের গভীরতা বাড়বে।
৩. পঞ্চম শনি (শিক্ষক) - সারা বছর
শনি আপনার চতুর্থ ও পঞ্চম ভাবের সাথে সম্পর্কিত। ২০২৬ সাল জুড়ে শনিদেব আপনার পঞ্চম ভাবে (মীন রাশি) অবস্থান করবেন। পঞ্চম ভাব হলো বুদ্ধি, শিক্ষা, সন্তান, মন্ত্র এবং প্রতিভার স্থান। এখানে শনির অবস্থানের ফলে আপনি কোনো সিদ্ধান্তই হুট করে নেবেন না; অনেক ভেবেচিন্তে, দায়িত্ব নিয়ে পা ফেলবেন।
এর প্রভাব:
- অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই বোধ জাগ্রত হবে।
- সন্তানদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি খুব সচেতন এবং সিরিয়াস থাকবেন।
- আপনার প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ আসবে, তবে তা কঠিন প্রতিযোগিতা বা ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে।
তবে একই সাথে, পঞ্চম শনির কারণে কাজে বিলম্ব, মানসিক চাপ এবং সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। "আমি যা করছি তা কি যথেষ্ট?"—এই ধরণের আত্মসংশয় দেখা দিতে পারে। এটি নেতিবাচক নয়; এটি শনিদেবের আপনাকে আরও দায়িত্বশীল করার প্রক্রিয়া।
৪. রাহু-কেতু (বিক্ষোভ সৃষ্টিকারী) - ডিসেম্বর পর্যন্ত
চতুর্থ ভাবে রাহু এবং দশম ভাবে কেতু ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। চতুর্থ ভাব হলো মা, গৃহ, যানবাহন, সম্পত্তি এবং মনের শান্তি; আর দশম ভাব হলো কর্ম, সম্মান, খ্যাতি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠা।
এর ফলে:
- বাড়িতে ছোটখাটো অশান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।
- হঠাৎ করেই বাসা বদল বা কাজের প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
- চাকরিতে "আমি কি সঠিক কাজ করছি?" বা "কাজের সার্থকতা কী?"—এই প্রশ্নগুলো বারবার মনে আসবে।
- কেতুর প্রভাবে মন সবসময় একটা নীরব অনুসন্ধানে থাকবে—আপনি আপনার পেশায় গভীর অর্থ বা পরমার্থ খুঁজতে চাইবেন।
যদি আপনি এটিকে সঠিক পথে চালিত করেন, তবে এটি পেশা পরিবর্তন, নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ বা বিদেশে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
কেরিয়ার ও কর্মজীবন: ঝড়ের শেষে প্রশান্তি
প্রথম ৫ মাস (জানুয়ারি - মে):
এই সময়টা চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয়ের জন্যই কিছুটা চাপ, অসন্তোষ এবং অনিশ্চয়তায় ভরা থাকতে পারে।
দশম ভাবে কেতু থাকায় কাজের প্রতি একধরণের অনীহা আসতে পারে। আপনার পরিশ্রমের সঠিক স্বীকৃতি না মেলা, আপনার পরামর্শকে গুরুত্ব না দেওয়া বা আপনার আড়ালে অফিস পলিটিক্স চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
বস বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিরোধ এবং নিজের প্রতি অহেতুক দোষারোপের অনুভূতি হতে পারে। অষ্টম বৃহস্পতির কারণে অজানা ভয়—যেমন "চাকরিটা থাকবে তো?", "আমার পজিশন নড়বড় হয়ে যাচ্ছে না তো?"—মনে আসতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যাদের জন্মছকে শক্তিশালী রাজযোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি কেবল ফলের বিলম্ব ঘটায়, সাফল্য কেড়ে নেয় না।
এই সময়ে করণীয়:
- হুট করে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না।
- কাজে কোথায় ভুল হচ্ছে তা ঠান্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করুন।
- ডকুমেন্টেশন, নিয়মকানুন এবং চুক্তির বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
- সহকর্মীদের সাথে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো; গুপ্ত শত্রু থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭ মাস (জুন - ডিসেম্বর):
২রা জুন থেকে আপনার কেরিয়ার গ্রাফ সম্পূর্ণ বদলে যেতে শুরু করবে। নবম ভাবে উচ্চস্থ বৃহস্পতির দৃষ্টি যখন আপনার রাশিতে পড়বে, তখন আপনার মধ্যে নতুন সাহস, স্বচ্ছতা এবং দিকনির্দেশনা আসবে।
আপনি হয়তো আপনার কাজে কোনো পরিবর্তন আনেননি, কিন্তু আপনাকে দেখার অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে।
পদোন্নতি (Promotion), বেতন বৃদ্ধি, ভালো দায়িত্ব পাওয়া, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং এবং বেসরকারি খাতের কর্মীদের জন্য ভালো প্রজেক্ট বা বিদেশ যাত্রার সুযোগ—এগুলো এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বেকার বৃশ্চিক রাশির জাতকরা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পছন্দসই চাকরি পেতে পারেন। বিশেষ করে:
- IT, সফটওয়্যার, ডেটা অ্যানালিটিক্স, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রের মানুষদের জন্য এটি 'গোল্ডেন পিরিয়ড'।
- সরকারি পরীক্ষা, বিভাগীয় পদোন্নতি বা বদলি আপনার অনুকূলে হতে পারে।
- অক্টোবরের শেষে বৃহস্পতি দশম ভাবে প্রবেশ করলে সমাজে আপনার মর্যাদা এবং পেশাগত সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
ব্যবসায়ী ও স্বনিযুক্তদের জন্য:
বছরের প্রথমার্ধে ক্যাশ ফ্লো বা নগদ টাকার সমস্যা এবং কাস্টমারদের পেমেন্টে দেরি হতে পারে। নতুন পার্টনারশিপ শুরু করার চেয়ে পুরনো সম্পর্কগুলো ঠিক রাখার দিকে নজর দিন।
জুন মাসের পর উচ্চস্থ বৃহস্পতির কৃপায়:
- নতুন শাখা খোলা, টার্নওভার বাড়ানো বা পণ্যের পরিসর বাড়ানোর জন্য এটি উপযুক্ত সময়।
- বিদেশি বা ভিনরাজ্যের ক্লায়েন্টদের থেকে কাজের সুযোগ বাড়বে।
- ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর জন্য কাজ করলে, একটি সঠিক সিদ্ধান্ত সারাজীবনের জন্য লাভজনক হতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্য: বাধা পেরিয়ে... অভাবনীয় সাফল্যের দিকে
বৃশ্চিক রাশির ব্যবসায়ীদের জন্য ২০২৬ সালটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। দশম ভাবে কেতু থাকায় ব্যবসায় একধরণের স্থবিরতা বা বৈরাগ্য আসতে পারে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেবগুরুর কৃপা আপনাকে রক্ষা করবে।
চ্যালেঞ্জ (জানুয়ারি - মে):
বছরের শুরুতে অষ্টম বৃহস্পতি এবং দশম কেতুর প্রভাবে:
- অংশীদারিত্ব বা পার্টনারশিপ ব্যবসায় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। পার্টনারের দ্বারা প্রতারিত হওয়া বা ভুল বোঝার সম্ভাবনা রয়েছে।
- সরকারি কাজ বা লাইসেন্স রিনিউয়ালে দেরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত উৎসাহে নতুন কোনো উদ্যোগে বড় বিনিয়োগ করা এই সময়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
সাফল্য (জুন - ডিসেম্বর):
যখনই বৃহস্পতি উচ্চস্থ (নবম ভাব) হবেন, ব্যবসায় দারুণ মোড় আসবে।
বৃহস্পতি তাঁর পঞ্চম দৃষ্টি দিয়ে আপনার রাশিকে এবং নবম দৃষ্টি দিয়ে আপনার পঞ্চম ভাবকে (ব্যবসায়িক বুদ্ধি) দেখবেন। এর ফলে:
- ব্যবসা সম্প্রসারণের (Expansion) জন্য এটি সুবর্ণ সময়। নতুন শোরুম খোলা বা নতুন পণ্য বাজারে আনা সফল হবে।
- আমদানি-রপ্তানি বা এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের লাভ আশাতীত হবে।
- বাজারে আপনার ব্যবসার সুনাম (Brand Value) বৃদ্ধি পাবে।
আর্থিক অবস্থা: ঋণের বোঝা থেকে মুক্তির স্বাদ
জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত:
আপনার দ্বিতীয় ভাব (ধন স্থান) এর অধিপতি বৃহস্পতি অষ্টম ভাবে থাকায় হাতে টাকা না থাকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। আয়ের তুলনায় অপ্রত্যাশিত খরচ বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের প্রয়োজন বা বাড়ি/গাড়ি মেরামতের মতো হঠাৎ আসা খরচ আপনার বাজেটের বাইরে চলে যেতে পারে।
পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে পারে। "আজ দেব, কাল দেব" করে সময় কাটাতে হতে পারে। এই সময়ে শেয়ার মার্কেট, ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং বা হাই রিস্ক ইনভেস্টমেন্ট একদম করবেন না। পার্টনারশিপে কোনো কাগজে সই করার আগে প্রতিটি শর্ত ভালো করে পড়ে নিন এবং ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
জুন মাসের পরবর্তী অবস্থা:
বৃহস্পতি কর্কট রাশিতে উচ্চস্থ হওয়ার মুহূর্ত থেকেই আপনার অর্থভাগ্যে দৈব কৃপা বর্ষিত হবে।
নবম ভাব থেকে বৃহস্পতি সরাসরি ধন ভাবকে না দেখলেও, আপনার ভাগ্যকে শক্তিশালী করে পরোক্ষভাবে অর্থের প্রবাহ বাড়াবেন।
পঞ্চম ভাব (বিনিয়োগ), তৃতীয় ভাব (চেষ্টা) এবং আপনার রাশির ওপর বৃহস্পতির দৃষ্টি থাকায়:
- পুরনো বকেয়া টাকা আদায় হবে; আটকে থাকা পেমেন্ট ক্লিয়ার হবে।
- যাঁরা অফার লেটার পেয়েও জয়েন করতে পারছিলেন না, তাঁদের জয়েনিং এবং বেতনের নিশ্চয়তা মিলবে।
- ধৈর্য ধরে করা বিনিয়োগ থেকে ভালো রিটার্ন বা সুদ মিলতে পারে।
- বাজেট তৈরি, সঞ্চয়ের অভ্যাস, বিমা বা পেনশনের পরিকল্পনার জন্য এটি সেরা সময়।
জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জমি-বাড়ি কেনা, ফ্ল্যাট বুকিং, মেরামতি বা গাড়ি বদলানোর পরিকল্পনা করলে তা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হবে।
পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবন: ধৈর্য ও সংলাপের প্রয়োজন
পারিবারিক পরিবেশ:
চতুর্থ ভাবে রাহু থাকায় বাড়ির শান্তিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ছোটখাটো বিষয় বড় হয়ে অহেতুক তর্কের সৃষ্টি করতে পারে।
বাড়ির কেউ হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন বা পরিবারের থেকে দূরে থাকার কথা ভাবতে পারেন।
মায়ের স্বাস্থ্য এবং তাঁর আবেগপ্রবণতা কিছুটা চিন্তার কারণ হতে পারে। বাসা বদল, বাড়িভাড়া নেওয়া, নির্মাণ কাজ শুরু বা গৃহঋণ সংক্রান্ত কাজগুলোও মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে উচ্চস্থ বৃহস্পতি নবম ভাবে আসার পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে টেনশন অনেকটাই কমে যাবে এবং একে অপরকে বোঝার মানসিকতা তৈরি হবে।
দাম্পত্য জীবন:
বছরের প্রথমার্ধে অষ্টম বৃহস্পতি, পঞ্চম শনি ও রাহুর প্রভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে তীব্র বাদানুবাদ, নীরব অভিমান বা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।
বিশেষ করে আর্থিক চাপ, কাজের টেনশন বা আত্মীয়দের হস্তক্ষেপ সম্পর্কের ফাটল ধরাতে পারে।
জুন মাসের পর আপনার রাশির ওপর বৃহস্পতির দৃষ্টি পড়ায়, আপনার কথাবার্তা ও চিন্তাভাবনায় পরিপক্কতা আসবে। রাগের মাথায় বলা কথার জন্য আপনি নিজেই অনুতপ্ত হবেন এবং তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। জীবনের মূল উদ্দেশ্য বা "এই সম্পর্ক কেন?"—এই প্রশ্নের গভীর উত্তর আপনি খুঁজে পাবেন।
অবিবাহিত ও প্রেম জীবন:
পঞ্চম শনি প্রেমের ক্ষেত্রে বড় পরীক্ষা।
অসৎ বা ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কগুলো এই সময়ে ভেঙে যাবে; গ্রহরা আপনাকে সঠিক এবং যোগ্য মানুষের দিকে নিয়ে যাবে।
জুন মাসের পর উচ্চস্থ বৃহস্পতি আপনার পঞ্চম ভাব দেখায়:
- বিয়ের কথা সিরিয়াসলি এগোতে পারে।
- যাঁদের বিয়েতে দেরি হচ্ছিল, তাঁদের বাধা কেটে যাবে।
- দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক এখন সামাজিকভাবে বিবাহে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।
স্বাস্থ্য: শরীর ও মনকে রক্ষা করার সময়
২০২৬ সালে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মূলত দুটি দিকে নজর দেওয়া জরুরি:
১. হজম, লিভার ও গ্যাসের সমস্যা: অষ্টম বৃহস্পতির কারণে ফ্যাটি লিভার, গ্যাস্ট্রিক, পেট ভার হয়ে থাকা, অ্যাসিডিটি বা কোলেস্টেরল বাড়ার মতো সমস্যা হতে পারে। বাঙালিরা ভোজনরসিক হন, তাই খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
২. মানসিক স্বাস্থ্য: চতুর্থ রাহু ও পঞ্চম শনির প্রভাবে উদ্বেগ (Anxiety), অতিরিক্ত চিন্তা, অনিদ্রা বা গোপন অবসাদের মতো সমস্যা হতে পারে।
মে মাস পর্যন্ত কোনো ছোটখাটো অসুস্থতাকেও অবহেলা করবেন না। নিয়মিত চেক-আপ, প্রেশার, সুগার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো ভালো। রাতে দেরি করে খাওয়ার অভ্যাস, তেল-ঝাল-মশলা যুক্ত খাবার বা ফাস্ট ফুড এবং মদ্যপান এড়িয়ে চললে অষ্টম বৃহস্পতির দোষ অনেকটাই কাটানো যাবে।
যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, ধ্যান বা মর্নিং ওয়াক—এগুলো ওষুধের চেয়েও বেশি কাজ দিতে পারে। জুন মাসের পর উচ্চস্থ বৃহস্পতি আপনার রাশিকে (দেহ স্থান) দেখায় দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি মিলবে এবং শরীরে নতুন উদ্যম ও হালকা ভাব অনুভব করবেন। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আপনার রাশি অধিপতি মঙ্গল নীচস্থ থাকায়, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা তর্কে হঠাৎ রেগে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ছোটখাটো চোট-আঘাত বা পেশিতে টান লাগার মতো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ
পঞ্চম ভাবে শনি থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য এটি মিশ্র ফলের সময়। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আপনি যতটাই পড়ুন না কেন, মনে হতে পারে তা যথেষ্ট নয়। চঞ্চল মনকে বশে আনা কঠিন হতে পারে। বন্ধুদের আড্ডা, সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইলের প্রতি আসক্তির কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ কমতে পারে।
তবে মনে রাখবেন, শনি একজন কঠোর শিক্ষক। আপনি যদি সত্যিই মন দিয়ে পড়েন, তবে শুরুতে ধীর গতি হলেও শেষে ফলাফল খুব ভালো ও মজবুত হবে। পরীক্ষার সময় ভয় লাগলেও, রুটিন তৈরি করে ছোট ছোট টার্গেট নিয়ে পড়লে এই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারবেন।
জুন মাসের পর: বৃহস্পতি নবম ভাবে আসায় উচ্চশিক্ষা (Higher Education), প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, গবেষণা (Research), পিএইচডি বা বিদেশে পড়ার অবারিত সুযোগ আসবে। যারা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলারশিপ বা ইন্টার্নশিপের চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য জুন থেকে ডিসেম্বর সময়টা খুব ভালো। পঞ্চম ভাবে বৃহস্পতির দৃষ্টি থাকায় পড়া দ্রুত মনে রাখা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং পরীক্ষার হলে সঠিক উত্তর মনে পড়ার মতো শুভ ফল পাবেন।
২০২৬ সালের শক্তিশালী প্রতিকার (Powerful Remedies)
এই বছর গ্রহের প্রতিকূলতা কাটাতে এবং শুভ ফল বাড়াতে কেবল পূজাই নয়, আপনার জীবনযাত্রায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনাও জরুরি। নিচের প্রতিকারগুলো বাঙালি সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেওয়া হলো:
১. অষ্টম বৃহস্পতির দোষ কাটাতে (মে মাস পর্যন্ত):
- প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রীবিষ্ণু, নারায়ন বা সাইবাবার মন্দিরে যান; সম্ভব হলে হলুদ ফুল বা বেসনের লাড্ডু ভোগ দিন।
- ছোলা বা ছোলার ডাল ভিজিয়ে গরু বা গরিবদের খাওয়ালে অর্থনৈতিক বাধা কাটে এবং কর্মদোষ কমে।
- রোজ "ওঁ গুরবে নমঃ" বা "ওঁ বৃহস্পতয়ে নমঃ" মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন।
- শিক্ষক, গুরুজন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করুন; তাঁদের মনে আঘাত না দেওয়াই বৃহস্পতির সেরা প্রতিকার।
২. পঞ্চম শনির শান্তির জন্য (সারা বছর):
- প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় হনুমান চালিশা বা শনি চালিশা পাঠ করুন। এটি শনির কুপ্রভাব কমায়।
- শনি প্রদোষ বা অমাবস্যার দিন তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালান এবং সাধ্যমতো কালো তিল দান করুন।
- দৈনন্দিন জীবনে আপনার অধীনস্থ কর্মচারী, যেমন- ড্রাইভার, মিস্ত্রি, গৃহসহায়ক বা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং ন্যায্য পাওনা দিন। এটি শনিকে তুষ্ট রাখে।
৩. রাহু-কেতু ও স্বাস্থ্যের প্রতিকার:
- মানসিক উদ্বেগ ও ভয় কাটাতে বাঙালিরা মা দুর্গা বা মা কালীর শরণাপন্ন হতে পারেন। দুর্গা কবচ বা চণ্ডীপাঠ শুনলে বা পড়লে মনের জোর বাড়ে।
- কেতুর প্রভাবে কেরিয়ারে বাধা এলে গণেশজির পূজা করুন বা মন্দিরে দূর্বা ঘাস দিন।
- রাস্তার কুকুরদের বিস্কুট বা খাবার দিন, আহত পশুপাখির সেবা করুন—এতে কেতু দোষ কাটে।
- প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট খোলা জায়গায় হাঁটুন বা ধ্যান করুন—এটি রাহুর নেতিবাচক প্রভাব ও মনের অস্থিরতা কমায়।
উপসংহার: ২০২৬ সালটি বৃশ্চিক রাশির জাতকদের জন্য একজন কঠোর শিক্ষকের মতো। প্রথম ৫ মাস কঠিন কর্মফল, আত্মবিশ্লেষণ এবং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেবে। পরের ৭ মাস যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তাঁদের জন্য দৈব আশীর্বাদ ও রাজযোগ অপেক্ষা করছে। ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, জেদ ও নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যান এবং প্রতিকারগুলো পালন করুন। আপনার পরিশ্রম, সাহস এবং ভক্তি—এই তিনের মিলনে ২০২৬ আপনার জীবনের এক স্মরণীয় বছর হয়ে উঠবে। জয় আপনার হবেই!


Want to find a good partner? Not sure who is the right match? Try Vedic Astrology! Our Star Matching service helps you find the perfect partner. You don't need your birth details, just your Rashi and Nakshatra. Try our free Star Match service before you make this big decision!
We have this service in many languages:
The Hindu Jyotish app helps you understand your life using Vedic astrology. It's like having a personal astrologer on your phone!